একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা / একটি শিক্ষাসফর রচনা [সঙ্গে PDF]অষ্টম - বাংলা এ্যাসাইনমেন্ট
যেকোনো ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় শিক্ষার একটি বিশেষ অঙ্গ। ভ্রমণ মানুষকে জীবনের ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকে মুক্ত করে সুবিশাল বিশ্বের অপার সৌন্দর্যের মাঝে জায়গা করে দেয়। বই পড়ে যে শিক্ষা অর্জন করা যায় না সেসব বাস্তব শিক্ষা পাওয়া যায় ভ্রমণের মধ্য দিয়ে। এই নিয়েই আজকের উপস্থাপন একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা / একটি শিক্ষাসফর রচনা।
নিম্নে আমার একটি শিক্ষাসফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হলঃ
আমি দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী(ব্যক্তিগতভাবে আমি না কিন্তু হাহাহা্)। আমাদের বার্ষিক পরীক্ষার থিউরি বিষয় শেষ হয়েছে কিন্তু প্রাক্টিক্যাল বাকী। বায়োলজি অংশে ভিজিটিং যুক্ত থাকায় শিক্ষকগণ আমাদের বলিলেন একটি শিক্ষা সফরে যেতে হবে।
আমি শিক্ষা সফরের কথা শুনে খুব বেশি উত্তেজিত হয়নি। বরং আমার মন বলছে না যাওয়াই ভাল। আমরা কি শিশুদের মত হই হুলোড় করব? সাথে তো শিক্ষকগন থাকবেন। বকাবকির ভয় আছে। তাছাড়া শিক্ষাসফরেও শিখতে হবে। আলাদাই বা কি আছে।
কিন্তু যেহেতু প্রাক্টিকালের সাথে বিষয়টি যুক্ত তাই যেতেই হবে।
পূর্ব প্রস্তুতিঃ আমাদের প্রিয় শিক্ষক দায়িত্ব নিলেন আমাদের ম্যানেজমেন্ট করার জন্য। আমরা সবাই মিলে স্থান ঠিক করলাম বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যাব টুংগিপাড়া।
এবংং যাওয়ার জন্য ঠিক করা হল বাস ভ্রমন করা হবে। পিকনিক করা হবে।
দুটো বাসের ভাড়া পিকনিক সহ আমরা একটা চাদা নির্ধারন করলাম। এরপর চাদা তুলে রাধুনি ঠিক করে বাস ভাড়াসহ সকল প্রস্তুতি সম্পর্ন করলাম কয়েকদিনের মধ্যেই। এবার নির্ধারিত দিন এসে পড়ল।
রওনাঃঃ একটা নতুন জায়গায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আবাসে বেড়াতে যাইব বলে মনটা অত্যান্ত খুশি খুশি ও এক অজানা উত্তেজনায় মন ভরে উঠল।
হালকা পাতলা সাজগোজ, ভাল পোষাক পরে ব্যাগ ব্যাগে হালকা স্নাকক্স ও একটি ডায়রি আর স্মার্টফোন নিয়া বাড়ি থেকে রওনা হলাম। পূর্ব নির্ধারিত স্থানে বাস অপেক্ষা করছে। সেখানে পৌছালাম। পৌছে দেখি প্রায় সবাই এসে গেছে। ছেলেরা মাল পাত্র তোলা ফেলা করছে, মেয়েরা ছোট জিনিসগুলো তুলে সাজাচ্ছে।
সবকিছু ঠিকঠাক করে বাস ছেড়ে দিল ৮ টার সময়।
আমি বাসের জানালার পাশে বসেছিলাম। আমার সামনেই দুজন শিক্ষক ছিলেন। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও সংকোচ বোধ করছিলাম। তাই জানালা দিয়া বাসের বাইরের দৃশ্য দেখছিলাম। বাস চলছে।
হঠাত দেখি অনেকেই এক সাথে গান গেয়ে উঠল, হেলে দুলে একসাথে মজা করা শুরু করল। আমি ভাবতেই পারিনি যে এমন হয়। মনে মনে ভাবলাম সামনে স্যার বসে, বকা দিলেই বুঝবে মজা।
স্থান দর্শনঃ আমরা দুই ঘন্টা পর পৌছালাম।
পৌছানোর পর কাধে ব্যাগ রেখে নেমে সবার সাথে চারিদিক দেখা শুরু করলাম। শিক্ষকগন আগেই নির্দেশনা দিলেন যেন আমরা বহু দূরে কোথাও না যাই।
আমরা যে যেখানে খুশি গেলাম। স্যার আমাদের সাথে ছিলনা তারা তারা রান্নার আয়োজনের বন্দবস্ত করছিলেন। মোটা মুটি আমরা কিছুক্ষন ইচ্ছামত ঘোরাঘুরি করে ছবি তুলে গল্প করে আনন্দে কাটালাম, চারপাশ দেখলাম কত সুন্দর, নয়নভিরাম দৃশ্য।
তারপর সকলেই একসাথে রান্নার কাজ করে খাওয়া দাওয়া শুরু করলাম। এখানে এক ভিন্ন পরিবেশ আনন্দ মুখর। বন্ধু বান্ধবদের স্কুলে যা ভাবতাম তার কিছুই এখানে নাই। খাওয়ার সময় আমরা একে অপরকে খাওয়ালাম, কেউ কেউ হাসি ঠাট্টায় কাড়াকাড়ি করে খাওয়ার প্রতিযোগীতার মত এক বৈচিত্রময় আনন্দ উপভোগের সহিত খাওয়া শেষ করলাম। এত মজা জীবনে আর কখনো হয়নি। শিক্ষা সফর সম্পর্কে আমার ধারনা কিছুটা বদলালো। খাওয়া দাওয়ার পর একটু বিশ্রাম, তার শিক্ষকগন আমাদের ছোট দলে ভাগ করে বিভিন্ন স্থাপনা, বঙ্গবন্ধুর মাজার, স্মৃতিভবন, ইত্যাদি যায়গায় নিয়ে বেড়াতে লাগলেন আর সবকিছুর বর্ণনা দিতে লাগলেন। আমরা ডায়রিতে সব নোট করে নিলাম। এভাবে হেটে, গল্প করে স্যারের সাথে বর্ণনা শুনে আর বাস্তব চোখে দেখে সত্যিই মনে হল এটাইত আসল জ্ঞান। এই মুহুর্তেই বুঝতে পারলাম শিক্ষা সফর কি, তার গুরুত্ব কত।
সবকিছু ভালভাবে দেখার আগেই দিন শেষ হয়ে যেতে লাগল তাই আমরা ফেরার প্রস্তুতি নিলাম।
ফিরে আসাঃ আমরা সবাই সবকিছু গুছিয়ে ফেরার জন্য বাসে উঠলাম। কিন্তু আমার মন যেন চাইছিল আরও থাকতে। যাই হোক ফিরে আসার সময় বাসে আমরা নাচ গান না করে বরং আলোচনা, দেখা দৃশ্য গুলো নিজেরা বর্ণনা, ইত্যাদি এক ভাললাগা শেয়ার করতে করতে বাসায় চলে আসলাম। ডায়রিতে ছিল কত বানি, বর্ণনা, জ্ঞানের এক অপুর্ব তথ্য আর হৃদয়ে ছিল বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জ্ঞানের এক অপ্সরিত ভান্ডার।
পরবর্তী অনুভূতি ঃঃ এর পর থেকে আমি শিক্ষা সফরের জন্য উদগ্রীব ছিলাম। শিক্ষা সফরের কথা শুনলেই মনটা আনন্দে নেচে উঠত।
আজ আমি মনে করি শিক্ষা সফর ছাড়া শিক্ষা বা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া বিদ্যা অপূর্ণ। ছাত্রজীবনও অপূর্ণ।
আমাদের সকলের উচিত শিক্ষা সফরে যাওয়া।
(সংক্ষেপিত)
0 Comments